শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৪ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
‌‌সম্প্রীতি সমাবেশ। কালের খবর সড়ক ও জনপদের ৩য় শ্রেণির কর্মকর্তার সম্পদের পাহাড়। কালের খবর  পেশাদার সাংবাদিকদের সবরকম সুরক্ষা দিতে কাজ করছে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার : এম আব্দুল্লাহ। কালের খবর সরকারি রাস্তা উদ্ধারের দাবিতে শাহজাদপুরে মানববন্ধন। কালের খবর ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ককে সুদৃঢ় করতে হবে : ইউএনও মনজুর আলম। কালের খবর মাটিরাঙ্গায় সেনাবাহিনীর মানবিক সহায়তা বিতরণ ও চিকিৎসা সেবা প্রদান। কালের খবর ‘দেশ স্বাধীনের পর তৈরি সংবিধানে কোনো জাতির পিতা ছিল না’ : আদালতকে অ্যাটর্নি জেনারেল। কালের খবর দ্রব্যমূল্যের এই বাজারে খরচ কমানোর ২৭ উপায়!। কালের খবর ওলামাদের মধ্যে রুহানী ঐক্য প্রয়োজন : জামায়াত আমির। কালের খবর আ.লীগ নেতা সুমন খান গ্রেফতার। কালের খবর
হুজুর আমারে আর মাইরেন না, শিকল খুইলা দেন আমি এইখানেই থাকমু। কালের খবর

হুজুর আমারে আর মাইরেন না, শিকল খুইলা দেন আমি এইখানেই থাকমু। কালের খবর

কালের খবর ডেস্ক  :

পাঞ্জাবি-পায়জামা পরিহিত বাচ্চাটাকে রবিবার রাতে যখন ইমারজেন্সি ওটিতে ঢুকানো হয় তখন বাজে ৩ টা। ব্যথা ও আতংকে বাচ্চা ছেলেটা অঝোর ধারায় কাঁদছিল। ওর ফাইলটা হাতে নিলাম, অবাক বিস্ময়ে তার এক্সরে ফিল্মগুলোতে চোখ বুলালাম। ১০ বছর বয়সী ছেলেটার পায়ের তিন জায়গায় ভাঙ্গা! বাচ্চাটার মাথায় হাতটা বুলিয়ে দিতেই সে একটু আস্বস্ত হলো।

ভীত সন্ত্রস্ত চোখে আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকাচ্ছে। যদিও ফাইলে ওর নাম লেখা, তারপরেও মাস্কটা খুলে ভীত ছেলেটার চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম নাম কি তোমার বাবা?
উত্তর এল- “মাসুম”।

-কীভাবে এক্সিডেন্ট করলে?

-ছাদ থেইকা পইড়া গেছিলাম।

পাশ থেকে এক ওটি বয় বলল, ‘স্যার মাদ্রাসা থেকে পালাতে গিয়ে ওর এই হাল!’ মাসুম ক্ষীণ কণ্ঠে প্রতিবাদ করল। ওর কাছ থেকে পুরো ঘটনাটা শুনতে চাইলাম। বাকি গল্পটা মাসুমের মুখেই শুনি-

‘আমি মাসুম, আমার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া। আমরা দুই ভাই দুই বোন। আমার ভাই এবার এসএসসি দিছে। বোনেরা স্কুলে পড়ে। আমার আব্বা বিদেশ থাকে। বেশি দুষ্টামি করতাম বলে মা আমারে ৫ দিন আগে মাদ্রাসা ভর্তি করাইয়া দেয়। আমি আমার মারে ছাড়া একদিনও থাকতে পারি না। মাদ্রাসায় বইসা কানতাম আর বাড়ি চইলা যাইতে চাইতাম। বাড়ি যাইতে চাইতাম বইলা হুজুর আমারে শিকল দিয়ে বাইন্ধা রাখছে টানা ৪ দিন। বেল্ট আর লাঠি দিয়ে মারছে। পিঠে এখনো দাগ আছে। ‘

‘হুজুরে বলছে, মায়ের কাছে এই সব বললে একেবারে মাইরা ফালাবে। ৪ দিন পর হুজুররে বলছি আমি এইখানেই থাকমু, আমারে আর মাইরেন না, শিকল খুইলা দেন। শিকল খুলার পরের দিন আমি মাদ্রাসার ছাদে উইঠা পাশের বাড়ির ছাদ দিয়ে পালাইতে যাই। ভাগ্য খারাপ, আমারে হুজুর দেইখা ফালায়। হুংকার দিয়া কয় এখুনি নাম তা না হইলে তোরে মাইরা ফালামু। আমি ভয় পাইয়া নামতে গিয়া ৩ তালা থেইকা মাটিতে পইড়া যাই। ‘

একটা বাচ্চা ছেলের নির্যাতনের গল্প তার নিজের মুখ থেকে শোনা মোটেও সুখকর ছিল না। ছেলেটার গলা কেপে উঠছিল বারে বারে সাথে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না।

-স্যার আমার পা ঠিক করতে পারবেন তো?

হেসে বললাম, হুম, ঠিক করে দেবো, এরপর দশ তলা থেকে পড়ে গেলেও তোমার কিছু হবে না।

-না স্যার, আমি আর দুস্টামি করমু না। আমার মারে আপনি একটু বলে দিয়েন। আর ওই হুজুরের যেনো বিচার হয় সেই ব্যাবস্থা কইরেন।

শিশু বয়সে ছেলেটার উপর যে হিংস্রতা হয়ে গেল এই রেশ থেকে যাবে আজীবন। তার মানসিক বিকাশ মুখ থুবড়ে পড়বে। প্রতিশোধের স্ফুলিঙ্গ তার অন্তরটা পুড়িয়ে দিবে। সেই পোড়া অন্তরের জ্বালা মেটাতে সেও একদিন ওই হুজুরের মত কাউকে শিকল দিয়ে বেধে পিটালে অবাক হব না।

[ডা. তানভীর শুভ, এম এস ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ট্রমাটোলজি অ্যান্ড আর্থোপেডিক রিহ্যাবিলিটেশন (নিটোর), এর ফেসবুক থেকে নেওয়া]

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com